সামসুল হক
————————————–
২০১০ সালের ৪ আগস্ট, বুধবার। ঢাকার সাভারে অবস্থিত বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং মরহুম আরাফাত রহমানের ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে থাকা ৮/১০টি দোকান ভাঙচুর করে জমিটি টাঙ্গাইল আওয়ামীলীগের এক নেতাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। গোটা ঘটনাটি ঘটান সাভারের তৎকালীন এসি ল্যান্ড মো. শরিফুজ্জামান (১৫৫২৪)। ২৪ বিসিএসের কর্মকর্তা (বিএনপি-র আমলে চাকরি), জন্ম ১৯৭৪ সাল, বাড়ি ঝিনাইদহে।
এ ঘটনায় সাভারের আলোচিত এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামানের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, যা মিডিয়াতে ছাপা হয়। এসি ল্যান্ড বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার স্থাপনা ভাঙতে গেলে কেয়ারটেকার আসাদুজ্জামান নোটিশ দেখতে চান। তখন শরিফুজ্জামান জানান, নোটিশ নেই। স্থাপনা ভাঙা হবে না। এ কথা জানিয়ে এসি ল্যান্ড ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই চারিদিকে পুলিশ দিয়ে ঘিরে ভাঙচুর শুরু হয়।
এ ঘটনার পর খবর পেয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এডভোকেট আলী আজম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি কথা বলেন এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামানের সাথে। এ সময় এসি ল্যান্ড এ ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করেন। তিনি আলী আজমকে বলেন, স্থাপনা ভাঙ্গা ভুল হয়ে গেছে। আপনারা কাগজপত্র নিয়ে আসেন, স্থাপনা আবার ঠিক করে দেয়া হবে। কিন্তু পরে আর কিছু করা হয়নি। এ ব্যাপারে শরিফুজ্জামানের সাথে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে সব কিছু জানেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাব্বি মিয়ার (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব, মহাপরিচালক বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে কর্মরত) সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি দেখভাল করছেন এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামান। তিনিই এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। এরপর আবার এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তখন তিনি বলেন, সব কিছুর উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তখন ঢাকার জেলা প্রশাসক ছিলেন আরেক দুবৃত্ত মহিবুল হক (অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বিশাল দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছে)।
ঘটনার কয়েকমাস আগে ৩ কোটি টাকায় পদ কিনে বসেছিল এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামান। সীমাহীন দুর্নীতির কারনে তাকে প্রত্যাহারের দাবীতে সাভারের জনগন আন্দোলন ও অবরোধ করেছিল এক সপ্তাহ আগে, তাকে প্রত্যাহার না করে ঐ দুবৃত্তকে ব্যবহার করে শত শত পুলিশ নিয়ে বিনা নোটিশে খালেদা জিয়ার বাড়ি ওই ভাঙচুর ও উচ্ছেদ করে জালিম সরকার। বিএনপি চেয়ারপারসনের জমিতে ভাংচুর ও লুটপাট চালাতে শেখ হাসিনার নির্দেশ প্রতিপালন করেছিল সাভারের মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্নীতিবাজ এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামান। অথচ ঐ জমির টাইটেল নিয়ে কোনো সমস্যাই ছিল না। ১৯৭০ সালে মেজর জিয়াউর রহমান অন্যান্য সামরিক অফিসারদের সাথে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন রাজফুলবাড়িয়া মৌজায় ৯ হাজার টাকায় ১৫ শতাংশের একখন্ড জমি কেনেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ওই জমিতে বেনজীর মোটরস, লিটন এন্টারপ্রাইজ, মদিনা এন্টারপ্রাইজসহ চারটি গ্যারেজ ও বিভিন্ন স্থাপনা ছিল। এসব দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়া দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতেন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে চোখ পড়ে খালেদা জিয়ার ট্যাক্স ফাইলের দিকে। সেখানে নথিবদ্ধ ছিল সাভারের ঐ জমিখন্ডটুকু। হঠাৎ এক দুপুরে শত শত পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে জমিটি বুঝিয়ে দেয়া হয় টাঙ্গাইলের এক আওয়ামীলীগ নেতাকে, এক অশুভ শক্তির ইশারায় – যার নাম হাসিনা। ঐ জমির টাইটেল নিয়া কোনো সমস্যা ছিল না, কেননা একই ভাবে একই মালিকের কাছ থেকে পাশের প্লটের ২৫ শতাংশ জমি কিনেছিলেন হাসিনার ফুপা (পরে সেনাপ্রধান) জেনারেল মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান, তাঁর সেই জায়গাতে কোনো সমস্যা দেখতে পায়নি শরিফুজ্জামান, এখনও তা অক্ষত।
সেই ডাকাত এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামান ইউএনও, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ট্রান্সপোর্ট পুলের ম্যানেজার ইত্যাদি পদ ঘুরে এখন অর্থ মন্ত্রণালয়াধীন অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) উপসচিব (কর) পদে কর্মরত।