প্রেস রিলিজ (৪/১/২০২৪)
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা। গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত “মার্চ ফর ইউনিটি” থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাইয়ের ঘোষণা (Proclamation of July) উপস্থাপনের দাবি জানায়। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা ঘোষণার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি বিশ্বাস করে- এই ঘোষণা ঘোষিত হওয়া বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই অভ্যুত্থানে যেমন বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিলো, তেমনি ঘোষণাপত্রেও জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকা আবশ্যক কর্তব্য বলে মনে করি আমরা।
সেই লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সারা দেশে ঘোষণাপত্রের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী (৬ জানুয়ারি- ১১ জানুয়ারি) কর্মসূচী ঘোষনা করছে। এরমধ্যে থাকবে
● লিফলেট বিতরণ
● সমাবেশ
● নানান মাত্রার জনসংযোগ
একই সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অভ্যুত্থানকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে দাবিসমূহ উপস্থাপন করা হলো-
১। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের বিনামূল্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা প্রদানের প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করতে হবে;
২। অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনী ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে;
৩। জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র প্রধান লক্ষ্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা ছিল না; বরং গত ৫৩ বছরের বৈষম্য, শোষণ ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলোপ করার লক্ষ্যে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দিতে হবে;
৪। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।
৫। ঘোষণাপত্রে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতৃত্ব পরিস্কারভাবে উল্লেখ থাকতে হবে;
৬। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যোগসূত্র রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা পরিস্কার করতে হবে;
৭। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের মধ্য দিয়ে নাগরিক পরিচয় প্রধান করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।
আগামী সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রতিটা জেলায় ঘোষণাপত্রের দাবিতে কর্মসূচী পালন করা হবে। সারা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলায় ছাত্র-নাগরিক, পেশাজীবী, কৃষক, শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনগণের মাঝে একযোগে গণসংযোগ চালাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সারা দেশের প্রতিটা জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এই কর্মসূচী পালন করবে। সেই সাথে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি- সরকার এখনো ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি। গণঅভ্যুত্থানের সাথে জড়িত সকল পক্ষের মতামত নিয়ে এই ঘোষণাপত্র তৈরি করা একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ৩১ জানুয়ারি এই ঘোষণাপত্র প্রকাশে প্রস্তুত ছিলো, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজ উদ্যোগে এই দায়িত্ব নেয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তা ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, গত ৪ দিনে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমাদের আহ্বান, এরকম একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সরকার কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করলে এব্যাপারে নিজেদের মতামত জানাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রস্তুত রয়েছে।
বার্তা প্রেরক
উমামা ফাতেমা
মুখপাত্র
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সামান্তা শারমিন
মুখপাত্র
জাতীয় নাগরিক কমিটি