অজ্ঞাতবশত অনেক মুসলিম এমন এক কাজ করে যাচ্ছেন, যার ফলে তার সকল আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আসুন জানি সেটি কি!
উমার ইবনে খাত্তাব বলেছেন, “তোমরা মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করোনা। কারন সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে। [বায়হাক্বী, আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহ.) এই সনদকে সহিহ বলেছেন।। সূত্রঃ ‘আহকামুল জিম্মাহ ১/৭২৩-৭২৪]
একটি প্রশ্নঃ দেখলে কি সমস্যা, আমিতো আর পূজা করছিনা, এমন বক্তব্যের উত্তরে তাদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন –
আপনি কি আপনার বন্ধুর মাকে কেউ প্রকাশ্যে ধর্ষণ করতে থাকলে সেটা দেখতে যাবেন, এই বলে যে আমিতো করছিনা?তুলনাটি চরম মনে হলেও বিশ্বাস করুন, শিরকের ব্যাপারটি তার চেয়েও ভয়ংকর।
আল্লাহর মতে সবচেয়ে বড় অন্যায় যাঃ
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্র সাথে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়।” (সুরাহ লুকমান, আয়াত : ১৩)
ঈমান কি আসলেই ভাঙবে?
রাসুল ﷺ বলেন, “তোমাদের কেউ কোন গর্হিত/অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন নিজের হাতে (শক্তি প্রয়োগে) তা সংশোধন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে যেন মুখ দ্বারা তা সংশোধন করে দেয়, আর যদি তাও না পারে তবে যেন সে ঐ কাজটিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হল ঈমানের নিম্নতম স্তর।” [সহিহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং ৭৮]
অথচ – আপনি ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে উপভোগ করেন। অন্তত মন থেকে ঘৃণা করলেও দুর্বলতম ঈমানদার হিসেবে আপনার ঈমান থাকত কিন্তু ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে তাদের অনুষ্ঠান উপভোগ করার পরেও কি আপনি দাবী করবেন যে- আপনার ঈমান ঠিক আছে? এটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।
ক্লাসিকাল আলেমগণ যা বলেনঃ
ঈমাম আয যাহাবী (রহ.) এর মতে, “মুসলিমগন কাফিরদের কোন উৎসবে অংশ নিবে না, যা কিনা তাদের ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঠিক যেমন করে কোন মুসলিম অন্য ধর্মের অনুশাসন এবং উপাসনার লক্ষ্যবস্তু গুলোকে গ্রহন করতে পারে না।” [সূত্রঃ তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস, ৪/১৯৩].আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, “কাফেরদের উৎসবের নিদর্শন এমন কিছুতে অংশ নেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়।” [সূত্রঃ মাজমু আল ফাতাওয়া, ২৯/১৯৩]
হাদীস থেকেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে কেউ কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা ধারণ করলো, সে তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত।” [সূনান আবু দাউদ, ৪/৪৪].তাদের পূজার উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো বা যাওয়া হচ্ছে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা। কেননা তারাও একে অপরকে শিরক-কুফরের অনুসারী হওয়ার কারণেই শুভেচ্ছা জানায়, আনন্দ করে। এছাড়া, অপর ধর্মের উৎসবের স্বীকৃতি দেয়া মানে – তার সেই শিরক বা কুফরের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা অথবা কমসে কম তার সেই শিরক বা কুফরের উপর থাকাতে খুশী প্রকাশ করা। একজন মুসলিম কখনোই শিরক বা কুফরের ঘটনায় সন্তুষ্ট হতে পারে না।
মূর্তিপূজার উৎস: আসুন – মূর্তিপূজার উৎসটা একটু জেনে নেই। আল্লাহ ক্বুরআনে নূহের (আ) জাতির উপাস্যগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন, যারা আসলে তাদের পূর্ববর্তী যুগের সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। নিচের হাদীসটি একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করি –.হযরত মুহাম্মাদ ইবনে কায়েস (রহ.) বলেন যে, ঐ লোকগুলো ছিলেন আল্লাহর ইবাদাতকারী, দ্বীনদার, আল্লাহ ওয়ালা ও সৎ। তাঁরা হযরত আদম (আ.) ও নূহ (আ.)-এর ছিলেন সত্য অনুসারী, যাদের অনুসরণ অন্য লোকেরাও করতো। যখন তারা মারা গেলেন। তখন তাদের অনুসারীরা পরস্পর বলাবলি করলো – ‘যদি আমরা এদের প্রতিমূর্তি তৈরী করে নেই, তবে ইবাদাতে আমাদের ভালভাবে মন বসবে এবং এদের প্রতিমূর্তি দেখে আমাদের ইবাদাতে আগ্রহ বাড়বে।’সুতরাং তারা তাই করল। অতঃপর যখন এই লোকগুলোও মারা গেল এবং তাদের বংশধরদের আগমণ ঘটল, তখন শয়তান তাদের কাছে এসে বললো, ’তোমাদের পূর্বপুরুষরাতো ঐ বু্যুর্গ ব্যক্তিদের পূজা করত এবং তাদের কাছে বৃষ্টি ইত্যাদির জন্য প্রার্থনা করত। সুতরাং – তোমরাও তাই করো।’ তারা তখন নিয়মিতভাবে ঐ মহান ব্যক্তিদের পূজা শুরু করে দিল। [সহীহ বুখারী, ৪৯২০ ও তাফসীর ইবনে কাসীর, ১৮/১৪২-১৪৪]
শয়তানের টেকনিকঃ
শয়তান সবসময় তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করতে সদাতৎপর। আর তার একটি পছন্দনীয় অস্ত্র হল কোন পাপ কাজের প্রতি আপনার বিতৃষ্ণার অনুভূতি ম্লান করতে করতে তাকে স্বাভাবিকের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। কোন পাপকাজের সাথে নিয়মিত জড়িত হতে থাকলে তাকে আর ততটা খারাপ মনে হয়না যতটা প্রথমে মনে হত।.স্যাটেলাইট চ্যানেলের সুবাদে হিন্দী নাটক সিরিয়ালে সাড়ম্বরে পূজা উদযাপনের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমাদের কাছে এটা আর তেমন ভয়ঙ্কর ব্যাপার মনে হয়না, তাই আমরা বাস্তবে দেখতে যেতে পারি। আর বাস্তবে দেখতে দেখতে একসময় আমরা না হোক আমাদের সন্তানেরা পূজা করতে দ্বিধা করবেনা। আমরা যেন ভুলে না যাই শয়তান অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল। চূড়ান্ত পথভ্রষ্টতা একদিনে আসেনা।..● আরো একটি আয়াতঃ.মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না, কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী স্থির করে, সে মহাপাপে আবদ্ধ হয়েছে।” (সূরাহ আন নিসা, আয়াত : ৪৮)
কারো অন্তর যদি কুফরির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়, যতভাবেই তাকে বুঝানো হোক, সে বুঝবে না। দোয়া করি আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুক। পরিশেষে শিরক থেকে বাচার
একটি দোয়াঃ
শির্কের ভয়ে দো‘আ –.«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ».“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া ‘আনা আ‘লামু ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা লা আ‘লামু।” অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞতাসারে (শির্ক) হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চাই। [আহমাদ ৪/৪০৩, নং ১৯৬০৬; ইমাম বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭১৬]
লেখকঃ মোহাম্মাদ তাহমিদ ইসলাম
সম্পাদক : মাহমুদুল ফিরোজ বাবুল, মোবাঃ +8801712-256830, ই-মেইল : mahmudulfiroz6830@gmail.com, অফিসঃ এফ এম মার্কেট(তয় তলা), শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।
সর্বস্ত্ব সংরক্ষত © শ্যামনগর বার্তা ২০২৪ ॥ ডিজাইনার : মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম