অনলাইন ডেস্কঃ
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত কিছুদিন ধরেই সহিংস বিক্ষোভ চলছে। মূলত কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভ চলাকালে দুই গোষ্ঠীই রকেট ও ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। প্রশ্ন উঠেছে মেইতেই ও কুকিরা ড্রোন ও রকেট লঞ্চারের মতো সমরাস্ত্র পাচ্ছে কোথায় থেকে?
গত বছরের মে মাসে মেইতেই ও কুকি দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, তা বেশ কয়েক মাস ধরে এক রকম বন্ধই ছিল। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুরের পরিস্থিতি।
সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধও হয়েছে। প্রথমবারের মতো ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনাও ঘটেছে। দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পরও মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
নতুন করে দুই সম্প্রদায়ের ছড়ানো সংঘর্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিজেপি সরকারও। দুই পক্ষের হাতেই দেখা যাচ্ছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। অস্থিতিশীলতার সুযোগে মণিপুরের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হয় অন্তত ৪ হাজার অস্ত্র। ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এসব অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এখন কুকি ও মেইতে সম্প্রদায়ের হাতে।
গত বছরের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মণিপুর পুলিশের হাতে জব্দ অস্ত্র ও গোলাবারুদের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মণিপুরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ভারতীয় অস্ত্রের পাশাপাশি চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মিয়ানমারের অস্ত্র ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে একে-৪৭, আইএনএসএএস,৭.৬২এমএম ও বিভিন্ন স্টেন কার্বাইন মেশিনগান।
এ ছাড়া দুই সম্প্রদায়ের অস্ত্র ভাণ্ডারে রয়েছে জার্মানির হেকলার অ্যান্ড কোচ, আমেরিকার কোল্ট এ-আর-ফিফটিন, এম-সিক্সটিন, এম-ফোর-এ-ওয়ান এবং চীনা এ-কে-ফিফটি সিক্স রাইফেল।
শুধু স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নয়, এদের অস্ত্র ভাণ্ডারে আছে বিধ্বংসী বোমা, ড্রোন, হ্যান্ড গ্রেনেড, রকেট লঞ্চার, মর্টার শেল ও ট্যাংক বিধ্বংসী নানা অস্ত্র। প্রশ্ন উঠেছে, দুটো বেসামরিক গোষ্ঠীর কাছে এসব সমরাস্ত্র গেল কীভাবে।
কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের অস্ত্র পর্যালোচনা করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক কালেক্টিভ অ্যাওয়ারনেস টু আনএক্সপ্লোডেড অর্ডন্যান্স নামের একটি সংস্থা। তাদের দাবি, কুকি ও মেইতেদের বহুল ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো চীন ও রাশিয়ার তৈরি।
ইন্ডিয়া টুডের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চলতি মাসে মণিপুরে ব্যবহার করা ড্রোনগুলো সম্ভবত চীনের জনপ্রিয় ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিজেআইয়ের তৈরি।
অস্ত্র উদ্ধার
মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর ও কাংপোকপি জেলার গহীন জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে গোপন একটি অস্ত্রাগারের সন্ধান পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
শুক্রবার সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী, মনিপুর পুলিশ, কেন্দ্রীয় এলিট ফোর্স সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের যৌথবাহিনীর গত ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে চূড়াচাঁদপুর ও কাংপোকপি জুড়ে বিস্তৃত গহীন জঙ্গলে একটি গোপন অস্ত্রাগার থেকে বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।’
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে ম্যাগজিনসহ একটি ৭.৬২ এমএম একে সিরিজ অ্যাসল্ট রাইফেল, তিনটি মাঝারি আকৃতির ক্রুড মর্টার, একটি মডিফায়েড এম-১৬ অ্যাসল্ট রাইফেল, দেশে তৈরি ৭.৫ ফুটের একটি রকেট, দেশে তৈরি একটি বড় মর্টার এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ।
মণিপুরে গত বছরের মে মাসে শুরু হওয়া সংঘাতের পর থেকে পুলিশের অস্ত্রাগার লুটপাটের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বড় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও অস্ত্রাগার থেকে বিভিন্ন সময়ে ৪ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র চুরি হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চুরি হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সিরিজ অভিযান পরিচালনা করেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় অন্তত ৩৩টি অভিযানে সর্বাধিক সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
১ সেপ্টেম্বর রাজধানী ইম্ফলের পশ্চিমে কৌতরুকে ড্রোন হামলার পর রাজ্যজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অ্যান্টি-ড্রোন ব্যবস্থা।