✍️Shamsul Alam
৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশ চেঞ্জ হয়ে গেছে। আগের জায়গায় নেই। যারা ভাবছেন, রাজনীতি করবো, টিকেট নিয়ে আসবো, লীগ তো আর নাই- কিছু টাকা আর লোকজন নিয়ে যাব, আমার দলের সাপোর্টতো আছেই, ব্যস কাম হয়ে গেলো- এমপি মন্ত্রী হয়ে যাবো। নারে ভাই, সেই দিন আর নাই। বাঘে খাইছে!
যারা ভাবছেন, এ যুগের বাচ্চারা তো রাজনীতি বোঝে না, করবে না- আমরাই করবো ওসব। নারে ভাই, ওরা হয়ত ট্রেডিশনাল রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু জুলাই-আগস্ট মাসে তারা যে বিপ্লবটা ঘটিয়েছে, গুলির সামনে বুক পেতে ইতিহাস রচনা করেছে- তাতে দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে দেখিয়ে দিয়েছে- রাজনীতি সমাজব্যবস্থার খাতায় নতুন পাঠ খুলেছে তারা। তাই তাদের ছোট করে দেখবেন না। তারা যে অসাধ্য সাধন করেছে, সেই গণবিপ্লবের শ্লোগান এখন আর ৫৫ হাজার বর্গমাইলে সীমাবদ্ধ নেই, সীমান্ত ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সংগ্রাম এই বিপ্লব সামনে আন্তর্জাতিক গবেষণার বিষয়বস্তু হবে। দেখবেন কত গবেষক আসে এদেশে।
এই যে ১৫ থেকে ৩০ বছরের যুবসমাজ বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে, তা কোনো রাজনৈতিক বোদ্ধা কি আগে বিশ্বাস করেছিল? আমরা মুস্টিমেয় কয়েকজন যখন লিখে চলছি, সংগঠিত করছিলাম “বিজয় হবে, পরিবর্তন ঘটবে” অনেকেই উপহাস করেছিলেন। এই যুবসমাজকে যেভাবে আমরা রিড করেছিলাম, সেভাবে তাদের আবেগ, অনুভুতি এবং উদ্দীপনা মূলধারার রাজনীতিকরা ধরতে পারেননি। কেননা তারা এদের চিনত না- বলতো ‘হাইব্রিড প্রজন্ম’- বলতো ‘ফার্মের মুরগি’! কিন্তু না, তারা দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের প্রশ্নে, অধিকারের প্রশ্নে, মুক্তির লড়াইয়ে তারাই সেরা। সিনিয়র জেনোরেশন যখন মার খেয়ে মাঠ ছেড়ে দিচ্ছে, তখন এরাই তাদের পথ তৈরি করে নিলো। এদের কোনো নেতা ছিল না, যেমনটা বলেছিলাম- “তুমিই নেতা” – হাজার হাজার নেতা দাড়িয়ে গেছে- রাজধানী থেকে সারা দেশে! বা যেমনটা বলেছিলাম, মিছিলে যেতে পারছেন না, ঘর থেকে বেরিয়ে বাসার সামনেই রাস্তায় দাড়িয়ে পড়ুন, তাতেই চলবে- ওরা লাখ লাখ কোটি হয়ে গেলো! এমনটা কি করে হলো? হয়ত থিউরি দিয়েছিলাম, কিন্ত কাজটা ওরা করে দেখিয়েছে- ইয়েস ইটস পসেবল!
এইযে ১৫ থেকে ৪০/৪৫ বছর এইজ গ্রুপের জনগন, এদের সংখ্যা কত- কত পার্সেন্ট ভোটার এখানে- হিসাব আছে? ৬০/৭০ পারসেন্ট হতে পারে। এরাই আগামীর প্রজন্ম- এরাই নির্ধারন করবে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে। ঐ খুনী পুলিশটার কথা স্মরণ করুন, “স্যার একটা গুলি করলে একটাই পড়ে যায়, বাকী সব দাড়িয়ে যায়। কী বিপদ!” বুঝলেন কিছু? সামনে ওরা কিন্তু দাড়িয়ে যবে। ভয় দিয়ে আর লাভ হবে না। তাই যারা রাজনীতি করবেন, এদের নিয়ে গবেষণা করুন, ওদের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করুন। ৫ আগস্টের আগে পরে দেশের মানুষের, বিশেষ করে ছাত্র-যুবসমাজের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, তা পর্যবেক্ষন করুন, তাদের সাথে পা মিলিয়ে চলার চেষ্টা করুন, নইলে কেবল মার্কা শক্ত আর টাকা দিয়ে বৈতরণী পার হতে পারবেন না।
আগামী দিনের রাজনীতি করবেন, সরকার বা রাষ্ট্র চালাবেন, এমনকি সমাজে নেতৃত্ব দিবেন কিংবা প্রশাসন, তাদের জন্য খুব ডিফিকাল্ট দিন আসছে। চাইলেই আর আপনি এটা ওটা বুঝ দিতে পারবেন না- উল্টাসিধা কিছু করবেন, স্বৈরাচার হবেন- তো রাস্তায় দাড়িয়ে যাবে। এটা কেবল যে ছাত্ররা যুবকরাই করবে তা কিন্তু নয়, সাধারন মানুষও দাড়িয়ে যাবে। এরা পথ দেখিয়েছে, মানুষের ভেতরকার সাহসটাকে বের করে এনেছে। তো ওরা দাড়িয়ে যাবে- প্রতিবাদ করবে বলে ফেলবে- ‘We want Justice’, কিংবা ‘দেশটা তোমার বাবার নাকি’? ওসি, ডিসি. এসপি, এমপি, মন্ত্রী কিংবা আরও ওপরে – সবাইকেই রেডি থাকতে হবে এটা শোনার জন্য, এবং তাদেরকে ডিল করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি হতে হবে। নেতা এমপি মন্ত্রী এলাকায় গিয়ে খবরদারী করবেন, পুলিশ নিয়ে দাপিয়ে বেড়াবেন, কাজ হবে না- ওরা দাড়িয়ে যাবে। বস্তিতে যাবেন মস্তানি করতে- একযোগে সবাই চিৎকার করে উঠবে। নেতা খেতার লম্ফ, পুলিশের মস্তানের অত্যাচার- আর করতে পারবেন না- দিন বদলে গেছে। আর যারা গণহত্যা চালিয়েছেন, ভাবছেন আবার খালে পানি আসবে নৌকা ভেড়াবেন, আবার সেই দিনে নিয়ে যাবেন- না, পারবেন না। বিচার তো হবেই আপনাদের – চিরকালের মত অন্যায় নির্যাতনের দিন শেষ।
কেননা ৫ই আগস্ট যে বিপ্লব ঘটেছে – তা এনেছে জাতীয় মুক্তি – আপনি আর কাউকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। তারা দাড়িয়ে যাবে।।