অনলাইন ডেস্কঃ
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগকেও বিপদে ফেলে গেছে। আমরা অন্যায়ভাবে কারো প্রতি জুলুম করতে বিশ্বাসী নই। তবে আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে, আল্লামা সাঈদীসহ কোরআনের পাখি আলেমদের যারা বিনা কারণে অত্যাচার করেছে, জুলুম করেছে, নির্যাতন করেছে বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হবেই।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পিরোজপুর সদরের মাছিমপুর নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা মাঠে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
মাসুদ সাঈদী বলেন, শেখ হাসিনার হাত বাংলাদেশের হাজার হাজার আলেমের রক্তে রঞ্জিত। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে হত্যার মাধ্যমে তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনার বুদ্ধিদাতা, পরামর্শদাতা এবং শেখ হাসিনার গডফাদার ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ থেকে তারা ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। সে কারণে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় জড়িত সকল দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করেছিল।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিল তিনি শেখের মেয়ে, তিনি পালান না। কিন্তু দিনশেষে আমরা দেখতে পেলাম হেলিকপ্টারে করে পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে অর্থনৈতিক অবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। দেশের ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করে তার দল ও আত্মীয়-স্বজন চেটেপুটে খেয়েছে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে আরও বলেন, শেখ হাসিনার হাতে এই পর্যন্ত যত বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে প্রত্যেকটির বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাকে উপস্থিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি খুনি হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে বাংলাদেশে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাকে প্রকাশ্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে আসছি ১৯৭১ সাল থেকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আমরা মনে করেছিলাম বোধহয় আমাদের মুক্তির সংগ্রাম শেষ হল। কিন্তু কষ্টের সঙ্গে বলতে হয় সেই মুক্তির সংগ্রাম আজও শেষ হয়নি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শেষ হয়নি। ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শেষ হয়নি। শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতাকর্মীদের কাছেই বাংলাদেশের অর্জিত আয়ের অধিকাংশ সম্পদ কুক্ষিগত ছিল। বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে টাকার পাহাড়। জনগণের অর্থ লুটপাট করে তারা তাদের নিজেদের আখের গুছিয়েছে।
সাবেক এ উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, বাংলার মানুষ যেভাবে ১৯৭১ সালে মুক্তি চেয়েছিল, একইভাবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের জনগণ এই স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্তির জন্য জীবনময়ী এক সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল। যে সংগ্রামের ফসল হিসাবে আমরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আমরা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে আমাদের শতশত সন্তানের রক্ত দিতে হয়েছে। আমাদের হাজারো সন্তান আহত হয়েছেন। আমাদের শত শত সন্তান চিরতরে চোখের আলো হারিয়েছেন।
মাসুদ সাঈদী বলেন, শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার অভিলাসে শেখ হাসিনা গুলি করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। শুধু তারা ছাত্রদেরকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি। বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন যারা করতেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের যারা তাদেরকে শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যা সব অভিযোগে তাদেরকে কারাগারে আটকে রেখেছিল। আমাদের নেতাদের মধ্যে ১১ জনকে তারা হত্যা করেছে।
পিরোজপুর পৌর সভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ওয়ার্ড সভাপতি মো. ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জহিরুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন জিয়ানগরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী।