দেশ বার্তাঃ
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নান। তার শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলেও কারাবন্দি অবস্থায় থাকায় “ডিপ্রেশনে” আছেন। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ দ ২ জন চিকিৎসকের পরামর্শে কারা হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর এম এ মান্নানকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হবে। কারাগারে তিনি ডিভিশনপ্রাপ্ত। হাসপাতালেও ডিভিশন পেয়েছেন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট কারাগার সূত্রে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এসব তথ্য জানিয়েছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) মো. ছগির মিয়া বলেন, “সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। কারা হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো থাকলেও ডিপ্রেশনে রয়েছেন। কারাগারে নিয়ে আসার পর প্রথমে যে অবস্থা ছিল, এখন তার চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন।”
ডিআইজি প্রিজনস বলেন, “তিনি সবার সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। ভালো লাগলে কারা হাসপাতালের ভেতরে চলাফেরা করছেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে কিংবা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।”
সিলেট কারা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আরাফাত ইসলাম বলেন, “এখন আগের চেয়ে ভালো। তবে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। তার ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা আছে। নতুন পরিবেশে থাকায় ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। ওসমানী হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ২ জন চিকিৎসকের পরামর্শে তার সার্বিক চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজন দেখা দিলে ওই চিকিৎসকদের পরামর্শ ও কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হবে।”
জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্জন কুমার মিত্রের আদালতে দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের এরোয়াখাই গ্রামের হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযাগে ১টি মামলা করেন। মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, রনজিত চন্দ্র সরকার, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, রেজাউল করিম শামীম, সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নাদের বখতসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
এই মামলায় এম এ মান্নানকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরদিন আদালতে পাঠানো হয় তাকে। এরপর থেকে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে তার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জামিন মঞ্জুর করা হয়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে থাকা অবস্থায় ৫ অক্টোবর সকালে এম এ মান্নান অসুস্থতাবোধ করেন। পরে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখানের চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, “এম এ মান্নান বয়স্ক মানুষ। শারীরিক নানা জটিলতা আছে। বহুদিন থেকে বুকে ও পেটে ব্যথার ওষুধ সেবন করেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝেছেন শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এ ছাড়া এখানে বক্ষব্যাধির কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। তাই সিলেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
সুনামগঞ্জ কারাগারের জেলার হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমরা এম এ মান্নানকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন সিলেটে নেওয়ার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিলেটে পাঠানো হয়েছে।”
সিলেট জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে এম এ মান্নানকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বদল হয়। নেওয়া হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে।
সর্বশেষ রবিবার (৬ অক্টোবর) এম এ মান্নানের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। এদিন তার পক্ষে সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানি শেষে বিচারক নির্জন কুমার মিত্র জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এম এ মান্নানের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, “এম এ মান্নান বয়স্ক মানুষ। আমরা তার শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বিবেচনা করে জামিনের আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকবার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। তখনও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন বিচারক।”
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জহুর আহমদের ভাই জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় এম এ মান্নানসহ ৯৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন আরও ১৫০ থেকে ২০০ জন। তবে এখন পর্যন্ত এম এম মান্নান ছাড়া এই মামলার এজাহারনামীয় আর কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে শান্তিগঞ্জে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে তার শাস্তির দাবিতে শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ শহরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একাধিকবার বিক্ষোভ করেছে।
এম এ মান্নান সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে চাকরিজীবন শেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। সুনামগঞ্জ ৩ আসন থেকে ২০০৮ সাল থেকে টানা ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তাকে মন্ত্রী করা হয়নি।